শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ১১:২১ পূর্বাহ্ন
কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। লকডাউনেও থামছে না মৃত্যুর মিছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৮১ নমুনা পরীক্ষা করে ১৮৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
এ নিয়ে জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭২৬ এবং মারা গেছেন ২০২ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৪৮৫ জন। মঙ্গলবার (২৯ জুন) রাতে জেলা প্রশাসকের অফিস এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জেলা প্রশাসকের অফিস জানায়, নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। নতুন করে শনাক্ত হওয়া ১৮৯ জনের মধ্যে কুষ্টিয়া সদরের ৮৪ জন, দৌলতপুরের ১২ জন, কুমারখালীর ৬২ জন, ভেড়ামারার আটজন, মিরপুরের ১৬ জন এবং খোকসার সাতজন রয়েছে। মৃত চারজনের মধ্যে তিনজন সদর উপজেলার এবং একজন কুমারখালীর বাসিন্দা।
এ পর্যন্ত জেলায় ৬২ হাজার ৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ৫৯ হাজার ৯৮৪ জনের। বাকিরা নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
বর্তমানে কুষ্টিয়ায় সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৩৯ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২০০ জন এবং হোম আইসোলেশনে আছেন ১ হাজার ৮৩৯ জন।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কুষ্টিয়া জেলায় চলমান লকডাউন আগামী ১ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত চলবে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম এ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, কুষ্টিয়ায় চলমান লকডাউন আগামী ১ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত চলবে। এ সময় ওষুধ, নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ছাড়া বাকি সবধরনের দোকান, শপিংমল বন্ধ থাকবে।
এদিকে জেলা ও উপজেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে খোলা রয়েছে মিষ্টি ও খাবার হোটেল, সাপ্তাহিক গরুর হাট, চা ও মুদি দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কুষ্টিয়া করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকলেও সাধারণ জনগণ ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্বাভাবিকভাবেই। অনেক বাইরে বের হলেও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম বলেন, কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পুলিশ মাঠে তৎপর রয়েছে। জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশি করা হচ্ছে। সবার কাছ থেকে লকডাউন কার্যকর করতে সহযোগিতা পাচ্ছি। জরুরি পণ্য সেবা ছাড়া সড়কে কোনো পরিবহন দেখছি না। এ ছাড়া যারা বাজার করতে বের হচ্ছেন তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের হচ্ছেন।
তিনি বলেন, শহরের পয়েন্টে পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়েছি। সেখানে চেক করে গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন নেই তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছি। জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে বিধিনিষেধ পালন করানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা বিধিনিষেধ না মানবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। সকল উপজেলায় হু হু করে বাড়ছে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা। লকডাউনের মধ্যেও কেউ কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে রাস্তাঘাটে চলাচল করছেন। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। ফলে লকডাউনের সুফল মিলবে না। জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার প্রবণতার কারণে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। করোনার সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। মানুষকে সচেতন করতে মাঠে নেমে কাজ করা হচ্ছে। আমি নিজেও বিভিন্ন স্থানে ঘুরে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছি। এ ছাড়া বিধিনিষেধ প্রতিপালনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। তারা লকডাউন কার্যকর করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন, বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।